মূল কথায় আসার আগে জেনে নিই দেশে থাকতেই পাসপোর্ট হারালে কী করতে হবে-
পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বৈধভাবে একজন মানুষের একটিই পাসপোর্ট থাকতে পারে। তাই পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে তার বিপরীতে নতুন পাসপোর্ট করতে হয়।
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে প্রথমেই কাছের থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করতে হবে। এরপর নতুন পাসপোর্টের জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে জিডির মূল কপি, একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও একটি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি। হারানো পাসপোর্টের ফটোকপি সাথে দিতে পারলে ভালো হয়। সে কারণে সব সময় পাসপোর্ট কিছু ফটোকপি এবং নাম্বারসহ অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করা ভালো।
জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেতে চাইলে ৬০০০ টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৭২ ঘন্টার মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। পাসপোর্টের সাধারণ ফি ৩০০০ টাকা। এ ফি জমা দিলে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে ৭ দিন। উভয় ক্ষেত্রে পুরনো রেকর্ড অথবা পুলিশি প্রতিবেদন পর্যালোচনা সাপেক্ষে পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। তাই এসব তথ্য ও পুলিশি প্রতিবেদন সংক্রান্ত জটিলতায় পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হতে পারে।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি-
চাকরি, ব্যবসা, ভ্রমণ বা শিক্ষার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়তই আমাদের যেতে হয়। বিদেশে যাওয়ার পর আমার পরিচয় বহনের একমাত্র প্রমাণ হলো পাসপোর্ট। কিন্তু কোনো কারণে পাসপোর্ট যদি হারিয়ে যায় তাহলে বিদেশের মাটিতে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সঠিক প্রমাণাদির অভাবে কারাগারেও যেতে হতে পারে আপনাকে। তাই বিদেশের মাটিতে পাসপোর্ট হারালে কী করবেন? চলুন সে বিষয়ে জেনে নিই।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যারা চাকরি নিয়ে যান তাঁদের অনেককে মালিকের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। মালিক পক্ষ থেকে তাদের সরকারি বিভিন্ন অনুমোদন করিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিজের প্রয়োজনে পাসপোর্টের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ব্যবসা, ফ্রি ভিসায় চাকরি করতে যান তাঁদের উচিত পাসপোর্ট সব সময় সঙ্গে রাখা।
তারপরও দুর্ঘটনাবশত পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। পাসপোর্টের ফটোকপি ও রোডপাস বা রাস্তায় চলাচলের প্রত্যয়নপত্র (যদি সঙ্গে থাকে) নিয়ে যোগাযোগ করলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আপনাকে নতুন পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করা হবে।
ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট খোয়ালে
আপনার বিদেশ ভ্রমণের পুরো আনন্দটাই মাটি হতে পারে যদি আপনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। কোনো কারণে যদি তা হারিয়েই ফেলেন তাহলে সবার আগে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। কোনো ট্যুর অপারেটর বা ট্র্যাভেল এজেন্সি যদি আপনার ভ্রমণে সহায়তা করে থাকে তবে তারাই আপনাকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সহায়তা করবে। এরপর আপনাকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ হাই কমিশন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন আপনার সব তথ্য পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে একটি পত্র বা দরখাস্ত পাঠাবে। এ পত্র বা দরখাস্তই আপনাকে সুন্দরভাবে দেশে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।
বিদেশে অবস্থান করার সময় নিজের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের কনস্যুলার শাখা থেকে বাংলাদেশিরা তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারবেন। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাসের আগেই নবায়ন করা ভালো।
বিদেশে নিজের বৈধতার সনদ হচ্ছে পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হবে আপনি বৈধ, না অবৈধ। তাই পাসপোর্ট যত্ন করে রেখে দেবেন। কোনোভাবেই হাতছাড়া করবেন না। বিদেশে বৈধ পাসপোর্ট অনেকে অবৈধভাবে বেচাকেনা করে। টাকার বিনিময়ে একজনের বৈধ পাসপোর্ট অবৈধ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। তাই পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের পাসপোর্ট রেখে এর বিনিময়ে একটি 'পাস' বা কার্ড দেয়। কর্মীরা যাতে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও কাজ করতে না পারে, তার জন্য এমনটি করা হয়। বাস্তবতা যাই হোক না কেন বিদেশে গেলে পাসপোর্টের প্রতি আপনাকে বাড়তি সতর্ক হতেই হবে।
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness