Tuesday, February 12, 2019

বিমান ভ্রমণের সময় ফোন বন্ধ করে কিংবা Airplane Mode দিয়ে রাখুন!


বহুবার বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বিমান উঠার সময় অনেককে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি। বারবার সংকেত দেওয়ার পরেও অনেকে মনে করেন এটা শুধু শুধুই একটা বার্তা।

নিরাপদ আকাশ ভ্রমণের দায়িত্ব শুধু পাইলটের একার নয়। যাত্রীদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। তবে ভ্রমণের প্রচুর অভিজ্ঞতায় যাত্রীদের কিছু ডেস্পারেট আচরণ আমার চোখে পড়েছে। এসব আচরণের কারণে যেকোন সময় সদ্য ঘটে যাওয়া নেপাল দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই বিমান ভ্রমণের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলুন-

১) প্লেন গ্রাউন্ড থেকে আকাশে উঠার সময় এবং আকাশ থেকে গ্রাউন্ডে নামার সময় মোবাইল চালু রেখে কথা বলার অভ্যাস পরিহার করুন।

২) ওয়েটিং রুমে অপেক্ষারত অবস্থায় প্রিয়জনদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারেন। তারপরও অহেতুক প্লেন ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে কেন প্রিয়জনদের সাথে কথা বলতে হবে? প্রিয়জনদের কাছে "এইমাত্র প্লেন আকাশে উঠে যাচ্ছে" এই নিউজের চাইতে সুস্থভাবে আপনি ফিরে আসাটা অধিক কাম্য।

৩) বিমান মাটি স্পর্শ করার আগে কেন মোবাইল অন করে রিস্ক নিয়ে প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন? আর মাত্র কয়েক মিনিট পরেই আপনি রিস্ক ফ্রি ভাবে সেই সুযোগ পাবেন। এরপর ইমিগ্রেশন লাইন ধরা এবং লাগেজের জন্য ওয়েটিং করা অবস্থায় আপনার হাতে মোবাইল আলাপের জন্য প্রচুর ফ্রি সময় আছে।

৪) বিশেষজ্ঞ নই তবে এটুকু বুঝতে পারি, এই দুই বিশেষ সময়ে প্লেনের পাইলট এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের মধ্যে ম্যাসেজ আদান প্রদান চলে। ম্যাসেজের সামান্য হেরফের কিংবা ভুল বুঝাবুঝির কারণে সদ্য ঘটে যাওয়া "নেপালের ত্রিভুবন ট্রাজেডি"র মতো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আপনার অন রাখা ফোনের সিগন্যাল পাইলট ও কন্ট্রোল টাওয়ারের মধ্যেকার ম্যাসেজ আদান প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এতে সমস্যা না হলে এই দুই বিশেষ সময়ে প্লেনের ক্রু ভাই বোনেরা আমাদেরকে বারবার মোবাইল সুইচ অফের তাগাদা দিতেন না।

৫) এই সময়ে প্রযুক্তিগত কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই সব মোবাইল ফোনেই Airplane Mode অপশনটি সংযুক্ত করা থাকে; এখন সেটা ব্যবহার করার জরুরি দায়িত্বটা আপনার-আমার-সবার।

সতর্ক হোন। আপনার মুহুর্তের ফ্যান্টাসি কয়েকশত মানুষের জীবনহানির কারণ হতে পারে। প্লেনের সিটে বসেই মোবাইল সুইচ অফ কিংবা এরোপ্লেন মুড করে দিন। পুনরায় গ্রাউন্ডে নেমে একেবারে থেমে না যাওয়া পর্যন্ত মোবাইল সুইচ অন বা টার্ন করবেন না।

নিজে সচেতন হোন। আপনার আশেপাশের কাউকে এমন ভুল করতে দেখলে বাধা দিন।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness

Monday, February 11, 2019

ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের তাজমহল হোটেল হতে সাবধান!


আমরা যারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াত করি, তাদের চলার পথে কুমিল্লায় "হোটেল তাজমহল " নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে? সাবধান! সেখানে ঢুকবেন না। ব্যবসার নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিনা অস্ত্রে ছিনতাই করছে কিছু ধড়িবাজ যুবকদের হোটেল বয় বানিয়ে। এসব হোটেলগুলোতে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার অনেক বন্ধু আছে কুমিল্লায়। তাদের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা ফেসবুকের মাধ্যমে সকল মহলকে সতর্ক করে দিন আর প্রশাসনকে জানান ।
সকলের প্রশ্ন তারা কি করেছে? চলার পথে ঢুকলাম। একজন এসে বলে, 'স্যার নিচে ভাল না, উপরে যান'। উপরে গেলাম। ক্ষুধার্ত ভদ্রলোক, অর্ডার দিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ। যথারীতি বিল চাইলাম। খেয়াল করলাম বয় ছেলেটি ক্যাশের লোকটিকে বলছে বিলটি বাড়িয়ে রাউন্ড ফিগার করে দিতে। লোকটি বলছে, 'চুপ ভদ্র লোক খেয়াল করছে'। মানে আমাকেও সে নজরে রাখছে । বিল হাতে নিয়ে তো আমি অবাক! এক ডিস সাদা ভাতের দাম তিনশত বিশ টাকা । বাকিটা আর নাইবা লিখি। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মান সম্মানের ভয়ে ফুল পেমেন্ট করলাম। আশা করবো কুমিল্লাবাসী ও প্রশাসন হোটেলগুলোর উপর একটু নজরদারী বাড়াবেন । অন্যকেউ যেন হেস্তনেস্ত না হয়।
বিঃদ্রঃ খাবার অর্ডার করার পূর্বে খাবারের দাম এবং মেনুকার্ড দেখে অর্ডার দিন।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness

অনভ্যস্ত পর্যটকরা এই সেতু পারাপারে সতর্ক থাকুন→


রাজস্থলী, রাঙামাটি সদর— এর,
নড়বড়ে ঝুলন্ত সেতু। সেতুর পাটাতন ভেঙে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু বিকল্প কোনো পথ না থাকায় স্থানীয় লোকজনকে বাধ্য হয়ে সেতুটি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা।

ভালো থাকুন | School of Awareness

ফাঁদ পেতেছে এক অভিনব প্রতারক চক্র, ভ্রমরপথে অপরিচিত কারো থেকে বাসে কেউ কিছু খাবেন না!


সেদিন সন্ধ্যা ৬:০০ টায় Mt পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে কিছু যাত্রী নিয়ে টেকনাফ থেকে রওনা দেয়। দমদমিয়া-সেন্টমার্টিন ঘাট থেকে অনেক যাত্রী উঠে, হোয়াইকং, উখিয়া এরপর লিঙ্ক রোড, চকরিয়া, চট্টগ্রাম থেকে অনেক যাত্রী উঠানামা করে। রাত ১:০০টা। চট্টগ্রাম শহর ছাড়িয়ে হু হু করে বাস এগিয়ে চলেছে ঢাকার দিকে। সদ্য বানানো মসৃণ রাস্তা। বেশির ভাগ যাত্রী সিটে বসে ঢুলছে। সামনের সিটে এক বৃদ্ধ তাঁর মেয়েকে নিয়ে বসেছেন। অভিজাত জামাকাপড় পরে আছেন তাঁরা। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে অন্য সব যাত্রীর দিকে মুখ করে বলতে শুরু করলেন তিনি—‘প্রিয় যাত্রী মহোদয়, আমার পোশাক-আশাক দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আমি ভিখারি নই। প্রভু আমাকে অনেক দিয়েছেন, কিন্তু কেড়ে নিয়েছেন আমার স্ত্রী সাবিহাকে। বিধির বিধান কে খণ্ডাতে পেরেছে, বলুন? কিছুদিন আগে আমার ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরে সব ছারখার হয়ে যায়। এর কিছু দিনের মধ্যে আমার এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যবসাও লাটে ওঠে। হঠাৎ করে এতটা ক্ষতি আমি সইতে পারিনি। তাই হয়তো কিছুদিন পরই আমার হার্ট অ্যাটাক করে। যেসব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগে আমার কাছে এসে বসে থাকত, তারা আমার এই দুর্দিনে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে। আমি দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ি। শরীরও খারাপ হতে থাকে। এক সময় ডাক্তার জানায়, আমার জীবনে খুব বেশি দিন অবশিষ্ট নেই। যেকোনো সময় ডাক এসে যেতে পারে। আমার এই যুবতী মেয়ে মিথিলা। দেখতেই পাচ্ছেন আপনারা। সে বেশ সুন্দরী। আমার অবর্তমানে এই মেয়ে নিষ্ঠুর পৃথিবীর বুকে একলা থাকলে তার কী যে দুর্দশা হবে, সে কথা ভেবেই আমি শিউরে উঠি!’ এই কথা কয়েকটি বলতে বলতেই বৃদ্ধের হেঁচকি ওঠা শুরু হয়। মেয়ে মিথিলা বাবাকে ধরে আবার সিটে বসিয়ে দেয়। এমন সময় বাসের পেছনের সিটে বসা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে পড়েন এবং বাসে বসে থাকা লোকদের সম্বোধন করে বলা শুরু করেন -ভদ্র মহোদয়গণ, আমি পেশায় ব্যবসায়ী। আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে ডাক্তার, বিবাহিত। এই আমার ছোট ছেলে। দুই বছর হলো ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছে। আমি এর বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছি। প্রভুর অশেষ দয়া, আমি এই বাসে এক সুন্দরী সুশীলা পাত্রীর দেখা পেলাম। আমি ওই বৃদ্ধকে অনুরোধ করছি, তিনি যদি আমার ছোট ছেলেকে উপযুক্ত মনে করেন, তবে আমি তাঁর মেয়েকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি আছি। আপনাদের সবার সামনে শপথ করছি, ওনার মেয়ে আমার বাড়িতে আমার পুত্রবধূ নয়, মেয়ে হয়েই থাকবে।’ এ পর্যায়ে সুপুরুষ ছোট ছেলে নিজের সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, ‘মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি বিয়েতে রাজি।’এক অনাবিল মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরে সবার ঘুম গেছে ছুটে! বাসের অন্য যাত্রীরা হাততালি দিয়ে এই সম্বন্ধকে স্বীকৃতি জানাল। এরই মধ্যে নাটকীয়ভাবে এক লোক দাঁড়িয়ে বললেন -আপনাদের সবাইকে অনেক অভিনন্দন! বাসেই যদি এই বিয়ের কার্যক্রম হয়ে যায়, তাহলে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। আমি পেশায় কাজি। বিয়ে পড়াই। আমি এই বিয়েটা পড়াতে পারলে মনে করব জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিয়ে পড়াতে পারলাম।’ যাত্রীরা একসঙ্গে বলে উঠল, দারুণ! মারহাবা! সেই উৎসাহপূর্ণ হট্টগোলের মাঝে কাজি সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সব আচার-অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। এ পর্যায়ে এক মধ্যবয়স্ক যাত্রী তাঁর সিটে দাঁড়িয়ে বললেন -‘অনেকদিন পর আমি আমার মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে যাচ্ছি। নাতি-নাতনিরা মিষ্টি পছন্দ করে। তাদের জন্য পাঁচ কেজি রসগোল্লা নিয়েছি। কিন্তু এই আনন্দের মুহূর্তে এই মিষ্টির সদ্ব্যবহার এই বাসেই হোক। পাত্রী তো আমার কন্যাসম'। বক্তব্য শেষ করে ভদ্রলোক কন্যার বাবার দিকে চেয়ে তাঁর অনুমতির অপেক্ষা করতে লাগলেন। মেয়ের বাবা ড্রাইভারের উদ্দেশে বলেন, ‘ড্রাইভার সাহেব, পাঁচ মিনিটের জন্য গাড়ি থামান দয়া করে। সবাই আগে মিষ্টি মুখ করুন। তারপর আমরা আবার যাত্রা শুরু করব ঢাকার দিকে'। 'ঠিক আছে স্যার’ বলে ড্রাইভার বাস থামিয়ে দিলেন। আনন্দে উদ্বেলিত মেয়ের বাবার নির্দেশে সেই মধ্যবয়সী ভদ্রলোক একে একে বাসযাত্রীদের মুখে রসগোল্লা পুরে দিলেন। এরপর ঘটলো এক ভিন্ন আবিস্কার। ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর যখন চোখ মেলে তাকাল তখন ভোর ৫:০০টা। নববিবাহিত বর-বউ, দুই পিতা, কাজি আর মিষ্টি বিতরণকারী বাদে বাসে সবাই আছে। তবে হ্যাঁ, কারোরই মানিব্যাগ, মোবাইল, গলার সোনার চেইন, হাতের বালা-চুড়ি, স্যুটকেস কোনো কিছুই আর জায়গা মতো নেই! তাই, অপরিচিত কারো থেকে বাসে কেউ কিছু খাবেন না। লেখাটি সংগৃহীত।

ভালো থাকুন | School of Awareness

Friday, February 8, 2019

মক্কায় হারিয়ে গেলে কী করবেন?


হজ পালন করতে মক্কায় এসে কম সময়ের মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হজযাত্রী সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেন। হজযাত্রী হারিয়ে গেলে তাওয়াফ, সাঈ ঠিকমতো করতে পারেন না। হঠাৎ করে সঙ্গী হারিয়ে গেলে হজযাত্রী দিশেহারা হয়ে পড়েন। যদিও স্থানীয় প্রবাসী, সৌদি কর্মী, মক্কার মিসফালা বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ে হারানো হজযাত্রীদের পৌঁছে দেন।

সৌদি আরবে পৌঁছে মক্কায় নির্দিষ্ট বাড়িতে মালপত্র রেখে হজযাত্রীরা ওমরাহ পালন করতে বের হন। তাড়াহুড়া করে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে তাওয়াফ, সাঈ করতে গিয়ে সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেন।

মসজিদুল হারাম বিশাল এলাকাজুড়ে। প্রায় ১০০টি প্রবেশপথ রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণের জন্য ভেতরে-বাইরে নির্মাণকাজ চলছে। প্রবেশপথগুলো দেখতে একই রকম হলেও নাম ও গেট নম্বর ভিন্ন।

ভিড়ের কারণে তাওয়াফ, সাঈ করতে গিয়ে হজযাত্রী বেশি হারান, তাই সঙ্গীকে আগে থাকতে চিনিয়ে দিন হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করতে হবে। যেমন, তাওয়াফ শেষ করে কোথায় নামাজ আদায় করবেন, তা চিনিয়ে দিন। আবার সাঈ করতে গিয়ে সাফা বা মারওয়া পাহাড়ে অপেক্ষা করতে পারেন।

মক্কার হজ কার্যালয় আইটি হেল্প ডেস্ক মোয়াল্লেম বা এজেন্সির মাধ্যমে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

নির্দিষ্ট প্রবেশপথ, যেমন বাদশা ফাহাদ ৭৯ নম্বর প্রবেশপথ ভিড়ের কারণে হারিয়ে গেলে বাদশা ফাহাদ ৭৯ নম্বর প্রবেশপথে অপেক্ষা করতে পারেন।

সব সময়ের জন্য আপনার সঙ্গীর মোবাইল নম্বর, এজেন্সির নাম, গ্রুপ লিডার (দলনেতা) মোবাইল নম্বর লিখে নিজের কাছে রাখুন। হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করুন।

উৎস: দৈনিক 'প্রথম আলো'য় ফেরদৌস ফয়সাল এর লেখা থেকে সংগৃহীত)।

ভালো থাকুন | School of Awareness

বিছানাকান্দি ভ্রমণে সতর্ক থাকুন।


বিগত ১৬ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখ রাতে আমি ও আমার ২ বন্ধু এবং প্রত্যেকের স্ত্রীসহ মোট ছয়জন গ্রীনলাইন বাসে ঢাকা রাজারবাগ থেকে রওনা হলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। সবাই ব্যাংকার হওয়ার সুবাদে শুক্র ও শনি ছুটি তার সাথে রবি ও সোম অফিস থেকে ছুটিসহ মোট ৪ দিনের জন্য সিলেট ও শ্রীমঙ্গল যাচ্ছি। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার আগেই হোটেল বুকিং দেয়া এবং জাফলং, লালাখাল, রাতারগুল, বিছানাকান্দি ও সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার জন্য একটি নোয়া মাইক্রোবাস ঠিক করা ছিল। ১৭ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৬.৩০ মিনিটে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি নিয়ে হোটেলে উঠলাম। পূর্বনির্ধারিত সকাল ৮.০০ টার সময় গাড়ী এসে হাজির হল এবং আমরা সবাই গাড়ীতে উঠলাম। আজকের গন্তব্য জাফলং ও লালাখাল। মধ্যপথে নাস্তা সেরে গাড়ী চলল গন্তব্যের উদ্দেশ্য। সিলেট-জাফলং সড়কের মধ্যেই লালাখাল অবস্থিত হওয়ায় আমি চাইলাম যে, আগে লালাখাল নেমে তারপর জাফলং যাব কিন্তু ড্রাইভার বললেন আসার পথে নামলে ভাল লাগবে (যাওয়ার পথে নামাটাই ভাল ছিল কেননা জাফলং এর বিভিন্ন স্পটে অনেক হাটতে হয়, ক্লান্ত হয়ে পড়ন্ত বিকেল/সন্ধ্যায় লালাখাল ভাল লাগেনা)। সারাদিন জাফলং এ কাটানোর পরে লালাখাল আসতে আসতে প্রায় বিকেল ৫টা বেজে যায়। শীতের দিন ৫টার সময় সূর্য প্রায় ডুবো ডুবো অবস্থায় লালাখাল আর ভাল লাগেনি। পরেরদিন অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর রোজ শনিবার নির্ধারিত সময় সকাল ৮.৩০ মিনিটে গাড়ী এসে হাজির আমরা উঠলাম রাতারগুল ও বিছানাকান্দি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় রাতারগুল ও বিছানাকান্দি অবস্থিত। দুইটি স্পটই খুব বেশি দিন হয়নি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। সিলেট থেকে বিছানাকান্দি যাওয়ার পথে রাতারগুল অবস্থিত তবে মুল সড়ক থেকে ৪ কি.মি. ভিতরে। ড্রাইভার বললেন আসার পথে রাতারগুল নামাটা ভাল হবে কিন্তু এবার আমি তার সাথে একমত না হয়ে বললাম আগে রাতারগুল নামব। রাতারগুল ভাল লাগে বর্ষাকালে তবে শীতকালে একটু অন্যরকম ভাল লাগে কেননা এ সময়ে জঙ্গলের কিছু অংশে পানি থাকে আর কিছু অংশে থাকেনা। তাই প্রকৃত জঙ্গল ও সোয়াম ফরেস্ট দুইটারই অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। রাতারগুল থেকে বের হয়ে বিছানাকান্দি পৌছালাম ২.৩০ মিনিটের দিকে (রাস্তা ভয়ানক খারাপ ছিল-রাস্তায় পিচ-ঢালাই ছিলনা বললেই চলে)। বিছানাকান্দি পৌছে মধ্যাহ্নভোজ সেরে বিছানাকান্দির অস্বাভাবিক সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। সৌন্দর্যের কিয়দাংশ দেখার জন্য একটি ছবি (সনি সি-৫ মোবাইলে তোলা) দিলাম। আমার কাছে বিছানাকান্দির সৌন্দর্য উপভোগের অনুভূতিটা ছিল ছেড়াদ্বীপ/নীলগিরি/সাজেক দেখার অনুভুতির মত। ভারতে অবস্থিত সাতটি পাহাড়ের মুখে এই বিছানাকান্দি অবস্থিত। অকৃত্রিম সৌন্দর্যের অধিকারী এই বিছানাকান্দির রূপের বর্ণনা দেয়ার মত ভাষা আমার নেই এই মুহুর্তে। সন্ধ্যা নামার পূর্বেই আমরা বোর্ট নিয়ে গোয়াইনঘাট এসে পৌছালাম (গোয়াইনঘাট থেকে বোর্ট এ আধা ঘন্টার মত সময় লাগে বিছানাকান্দি যেতে)। রহনা হলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। আমাদের সাথে মিরপুর ও কেরানীগঞ্জের দুইটা দল ছিল এবং তাদেরও গাড়ী ছিল এবং তিনটা গাড়ীই একত্রে রওনা হল তবে আমাদের গাড়ীটা সবার প্রথমে ছিল। গোয়াইনঘাট থেকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ প্রধান সড়ক পর্যন্ত কিছু দূর পর পরই বাজার বা দোকান ছিল। গোয়াইনঘাট থেকে দের ঘন্টার মত পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের গাড়ী যখন তোয়াকুল (গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি ইউনিয়ন) বাজারের খুব কাছাকাছি (সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ প্রধান সড়ক থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘন্টার দুরত্ব) সময় বাজে ৬.২০-৬.৩০ মিনিট। তখন একটি ছোট ব্রিজ পাড় হওয়ার পরই দেখা গেল রাস্তার মাঝে বড় বড় পাথর ফেলানো। এই কথাগুলো আমি যখন লিখছি, ল্যাবটপ এর কি বোর্ডে একটা একটা চাপ দিচ্ছি আর আমার শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। যাইহোক রাস্তার মাঝে বড় বড় পাথর ফেলানো দেখে মনে হচ্ছিল এইবার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মূহুর্তের খুব কাছাকাছি। পাথরের সামনে গাড়ী থামার সাথে সাথেই রাস্তার দুইপাশ থেকে ৮-১০ জন মুখ কাপড় দিয়ে আটকানো গাড়ীর চারদিক ঘিরে ফেলল তারা। কোনকিছু বুঝার আগেই ড্রাইভারকে গাড়ী থেকে বের করে গাড়ীর চাবি নিয়ে গেল। সকলের হাতে খুব ধারালো বল্লম আর চাকু ছিল। বল্লমগুলো দেখে মনে হচ্ছিল এইগুলো ১০,০০০ বি.সি. মুভিতে ব্যবহার করা হয়েছিল; একটা কোপ দিয়ে একত্রে তিন-চার জন মারা যাবে। একজন ড্রাইভারের পিঠে চাকু ধরল আরেকজন ধারালো একটি চাকু নিয়ে গাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করল। আমার আগে থেকেই ধারনা ছিল যে তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য হয়ত কাউকে আঘাত করবে যার কারণে আমি প্রায় নির্বাক হয়ে গেছিলাম। একে একে আমরা ছয় জনই আমাদের কাছে যা যা ছিল অর্থাৎ মানিব্যাগ, মোবাইল ও অন্যান্য ব্যগসহ সকল জিনিসপত্র দিয়ে দিলাম। আর আমাদের সহধর্মিনীদের কাছে কিছু স্বর্ণের জিনিস ছিল সবই খুলে দিতে হলো (বাঙালী নারী বিয়ের/এনগেইজমেন্ট এর সময় পাওয়া জিনিস নাকি খুলতে হয়না?) যাইহোক আমাদের স্ত্রীদের মত যেসব বাঙালী নারীরা আছেন যারা এইগুলো সবসময় পরে থাকেন তাদের বলছি আপনাদের এইসব জায়গায় যাওয়ার দরকার নেই, সম্পদ যাবে সাথে যাবেন আপনারাও। গাড়ীর ভিতর তন্ন-তন্ন করে খুঁজে যখন আরকিছু পাইলেন না তখন ড্রাইভারকে চাবি দিয়ে রাস্তার পাথর সরিয়ে দিলেন ড্রাইভার গাড়ী টান দিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আমার ধারনা ছিল ডাকাতদল সব গাড়ীগুলো ডাকাতি করবে। আর এ লক্ষ্যে একজন ডাকাত আমাদের গাড়ীর ভিতরে ডুকে তাড়াহুড়া করছিল। তাই সবকিছু দিয়ে দিলেও কিছু ভুলবশত ফেলে রেখে যায়। অতপর, ড্রাইভারকে জজ্ঞেস করলাম ভাই পিছনের গাড়ীগুলোর কি অবস্থা? উনি বললেন গাড়ীগুলো ঘুরিয়ে পেছনের দিকে চলে গেছে। কিন্তু রাস্তা এত সরু যে আমাদের পেছনে থাকা হাই এজ গাড়ীটা ঘুরানো সম্ভব ছিলনা, ঠিক পেছনের গাড়ীতে থাকা লোকজন ফ্যামিলিসহ (৬-৮ জন) কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন। জানিনা তাদের কি অবস্থা! গাড়ী ছাড়ার পর ড্রাইভারকে বললাম সোজা পুলিশ স্টেশনে যাবেন। ড্রাইভার কথামত সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ প্রধান সড়কে অবস্থিত একটি পুলিশ ফাঁড়ীতে (গোয়াইনঘাট উপজেলার অধীন) নিয়ে গেলেন। দায়িত্বরত এস.আই. বললেন ঐ এলাকা কোম্পানীগঞ্জের অধীনে তারা জিডি কিংবা মামলা নিবেন না (জানি বাংলাদেশে এগুলো দিয়ে কেউ কোন দিন কিছু পেয়েছে কি না তা আমার জানা নেই)। আমি তাকে বললাম ভাই এটা তোয়াকুল বাজারের পাসেই আর এটাতো গোয়াইনঘাটের মধ্যেই। তিনি বললেন না আপনাদের ঘটনাটা যেখানে ঘটেছে ঐ জায়াগাটা কোম্পানীগঞ্জের অধীন। তিনি যেভাবে বলতে ছিলেন মনে হলো তিনি আমাদের সাথে ছিলেন (পরে অবশ্য জানতে পারলাম জায়গাটা গোয়াইনঘাটের অধীনেই ছিল। এস.আই. সাহেবকে আমার পরিচয় দিলাম এবং বললাম আমার হলের সাবেক রুমমেট ডিবিতে সিনি.এ.সি হিসেবে আছে, আমার প্রাক্তন কলিগ বেশ কয়েকজন এ.এস.পি এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধু এ.এস.পি.। কোন কিছুর মাধ্যমেই তাকে জিডি করার জন্য রাজি করাতে পারলাম না। নিজেকে একটু হীনমন্য ভাবায় আর কাউকে ফোন দেয়া হলো না। পুলিশ ফাঁড়ী থেকে কোম্পানীগঞ্জ থানার দূরত্ব প্রায় দুই ঘন্টা হওয়ায় আর জিডি করতে যাওয়া আর হলো না। পরের দিন সকালে শ্রীমঙ্গলের পরিবর্তে ঢাকার উদ্দেশ্যে রাওনা হলাম।
এই ভ্রমণ থেকে আমার পর্যবেক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
১. বাংলাদেশের পর্যটন এখনও প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ হয়নি (আমার ধারণা এলাকাবাসীর মাধ্যমেই ডাকাতি হয়েছে এবং আমাদের ড্রাইভারও জড়িত ছিলেন)। 
২. ভ্রমণকালে বাঙালী নারীর বাঙ্গালিত্ব কিছুটা পরিহার করতে হবে।
৩. দুর্গম জায়গায় যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই স্থানীয়দের কাছে থেকে তথ্য এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম্বার নিয়ে রাখুন (ফিরতে বিলম্ব হতে তাদের সহায়তা নেয়ার জন্য)। 
৪. দুর্গম জায়গা থেকে সন্ধ্যার পূর্বে অবশ্যই ফিরে আসুন (বাংলাদেশের দুর্গম স্থানে বসে সূর্যাস্ত দেখা আপনাদের সাথে মানায় না)।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness

শিক্ষাসফর এবং ভ্রমণে গিয়ে সচেতন হোন; মারাত্মক এক ঝুঁকি পাহাড় ধস!


সম্প্রতি হিমছড়িতে পাহাড়ধসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকার খাড়া ঝরনায় (রংধনু ঝরনা) গোসলের সময় পাহাড়ধসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর নাম সাব্বির আলম রিদুয়ান।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হিমছড়ি পাহাড়ের খাড়া ঝরনা স্পটটি রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের আওতাধীন।

সেসময় সাগরের নিম্নচাপ থাকায় কক্সবাজারে দুই দিন ধরে টানা ভারী বর্ষণ চলছিল। সে কারণে শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে ফাটল ধরেছিল। ফাটলের কারণে হিমছড়ি পাহাড়ের একটি অংশ ধসে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

সেদিন বিকেল চারটার দিকে সাব্বিরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থী কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় ঝরনা দেখতে যান। একপর্যায়ে তাঁরা হিমছড়ির খাড়া ঝরনায় গোসল করতে নামেন। এ সময় প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে আকস্মিকভাবে পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে সাব্বির মাটিচাপা পড়েন।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness